স্যাফো, দ্য টেন্থ মিউজ

প্রবন্ধ ফুটনোটে জলছাপ
স্যাফো, দ্য টেন্থ মিউজ

মানুষ কি আমাদের মনে রাখবে না

আসন্ন ভবিষ্যতের দিনগুলোতে,

তোমার উষ্ণ-রঙা প্রেমময় রূপ

আর তোমার জন্যে আমার প্রেম?

তুমি, বেড়ে ওঠা হায়াসিন্থ

একটা শান্ত নদীর ধারে;

আমি, জলজ প্রতিবিম্ব

আর ভেঙ্গে যাওয়া কিরণ।

সময়টা ৬৩০ থেকে ৬১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে কোনো এক সময়, সম্ভবত ৬১০।

স্থান প্রাচীন গ্রিসের লেসবস দ্বীপ।

এক ধনী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, স্যাফো। বিশ্বের প্রথম নারী কবি। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী মিউজ বা

কাব্যলক্ষ্মীর সংখ্যা নয় জন হলেও প্লেটোর মতে তা আসলে দশ জন। তিনি নয়জন দেবকন্যার সাথে মর্ত্যের

কবি স্যাফোর নাম যুক্ত করে বলেছেন,

Some say the Muses are nine: how careless!

Look, there’s Sappho too, from Lesbos, the tenth.

তাঁর মাতাপিতার পরিচয় সম্পর্কে জানা যায় না, তবে ২০১৪ সালে ‘ব্রাদার্স পোয়েম’ নামে তাঁর একটা কবিতা

আবিষ্কৃত হয়, যেখানে তাঁর দুই ভাইয়ের নাম আছে, অনেকের মতে তাঁর তিন ভাই ছিলো। স্যাফোর লেখা থেকে

অনেকে ক্লেইস নামে তাঁর একটি কন্যার কথা বললেও সব ঐতিহাসিক এই তথ্য মানতে নারাজ।


I have a daughter, golden,

Beautiful, like a flower -

Kleis, my love -

And I would not exchange her for

All the riches of Lydia……

কোথাও তাঁকে স্যাফোর কন্যা, আবার কোথাও তাঁকে স্যাফোর মা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর স্বামী

সারকাইলাস বিত্তবান ছিলেন। স্যাফোর কোন ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি পাওয়া যায় নি। 'টিথোনাস পয়েম' এ তিনি

তাঁর চুলের বর্ণনায় লিখেছেন,

Girls, you be ardent for the fragrant-blossomed

Muses’ lovely gifts, for the clear melodious lyre:

But now old age has seized my tender body,

Now my hair is white, and no longer dark.

দ্বিতীয় শতাব্দীর প্যাপিরাস সাহিত্য থেকে জানা যায় তিনি খর্বাকায় ছিলেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে

এসব তথ্যের কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, তবে পৃথিবী তাঁকে মনে রেখেছে তাঁর কর্মে, তিনি লিখেছেন,

someone will remember us

I say

even in another time

স্যাফো’র দুটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো- অড টু আফ্রোদিতি বা আফ্রোদিতির জয়গাঁথা এবং টিথোনাস

পোয়েম। প্রাচীন টীকাকারদের মতে স্যাফো গীতিকবিতার পাশাপাশি 'শোকগাথা' এবং পাঁচমাত্রা'র কবিতাও রচনা

করেছেন। স্যাফো প্রায় দশ হাজার পঙ্‌ক্তি রচনা করেছিলেন বলে ধারণা করা হলেও অধিকাংশ কবিতাই হারিয়ে

গেছে। বলা হয়ে থাকে, ১৪১ খ্রিস্টাব্দে এবং ১০৭৩ খ্রিস্টাব্দে পরপর দুইবার চার্চের আদেশে তীব্র যৌনতার

অপবাদে স্যাফোর অনেক কবিতা ধ্বংস করা হয়েছে।

স্যাফো লায়ার নামে এক গ্রীক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাঁর লেখা কবিতা সুর করে পড়তেন বা গাইতেন। বলা হয়ে

থাকে স্যাফো যে লায়ার বাজিয়ে গান গাইতেন পরবর্তীতে লিরিক শব্দটা এই লায়ার থেকেই এসেছে। তাঁর লেখা

আলোকিত বলে বিবেচিত হলেও তীব্রভাবে তা সমালোচিতও হয়েছে। তাঁর সৃজনশীল কাজের চেয়ে তাঁকে নিয়েই

আসলে বেশি মাতামাতি করেছে সমকাল ও ইতিহাস, কারণ তিনি একজন নারী। গ্রীক নগর রাষ্ট্রে নারীদের

পক্ষে প্রায়ান্ধকার যুগে বাস করেও নান্দনিক প্রেমের কবিতার বদলে স্যাফো লিখেছেন ব্যক্তিসত্তা

উন্মোচনের কথা। দুঃসাহসে ভর করে হাজার বছর আগে স্যাফো লিখেছেন,

I desire

And I crave.

You set me on fire.

নারীলেখনীতে এসব সাহসী উচ্চারণ গণ্য করা হয় নির্লজ্জতা রূপে। এজন্য তাঁকে অনেক অপবাদ আর

সমালোচনা বইতে হয়েছে। শব্দ নির্বাচনে তিনি ছিলেন খুব সাহসী। দুঃখ-বেদনা নিয়ে তিনি মজা করতেও ছাড়েননি,

শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে স্যাফো স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেছেন,

Virginity, virginity

Where will you go when you’ve left me?


I’ll never come back to you, bride,

I’ll never come back to you.

কবিতা ছাড়াও তিনি নারীর প্রতি নারীর প্রেম এবং আকাঙ্খা'র প্রতীক হিসেবে পরিচিত। কেননা তাঁর কবিতায়

নারীর প্রতি তীব্র প্রেম ও কামনা লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজি শব্দ 'স্যাপিক' এবং 'লেসবিয়ান' এসেছে যথাক্রমে

তাঁর ও তাঁর জন্মভূমির নাম থেকে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে নির্জলা সত্যের সাহসী উচ্চারণ বৈপ্লবিক হলেও তৎকালীন পিতৃতান্ত্রিক

সমাজ কবির ঔদ্ধত্য মেনে নিতে পারেনি। তাঁকে মুখোমুখি করা হয় সমাজ, আইন ও নৈতিকতার। তাঁকে সমকামী

হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এটা নিয়ে যথেষ্ট তর্ক বিতর্ক আছে। কেননা তিনি যেমন নারী সঙ্গ পছন্দ করতেন

সক্রেটিসও তেমনি পুরুষ সঙ্গ পছন্দ করতেন। এর পুরোটাই যে যৌনতা বিষয়ক, তা নাও হতে পারে, কারণ তাঁর

লেখা কবিতায় ফাউন নামে তাঁর এক প্রেমিকের কথা এসেছে,

বিবর্ণ গোলাপের পাতা ঝরে পড়ে

ঝর্ণার জলে;

আর মৃদু বেণুকার সুর

গুমোট নিস্তব্ধতাকে ছুঁড়ে ফেলে।

কিন্তু আমি অপেক্ষা করি আর শুনি

যতোক্ষণ না নিষ্পেষিত নুড়ি

আমাকে বলে, সবাই অধৈর্য,

এতো কেবল ফাউনের পদশব্দ।

বলা হয়ে থাকে যে, ফাউন ছিলেন লিসবসের একজন বৃদ্ধ ও কদাকার দেখতে একজন নৌকার মাঝি। তার নৌকায়

আফ্রোদিতি এক বৃদ্ধার ছদ্মবেশে চড়েছিলো। ফাউন তাকে দীর্ঘ পথ পার করে দিয়েও কোন টাকা নেয়নি।

ছদ্মবেশি আফ্রোদিতি খুশী হয়ে তাকে এক বাক্স মলম উপহার দিয়েছিলো। এটা গায়ে মাখার পর ফাউন তরুণ ও

সুদর্শন হয়ে ওঠে।

কবিতা লেখার পাশাপাশি স্যাফো প্লেটো, সক্রেটিসের মতো শিক্ষকতা করতেন। অবিবাহিত মেয়েদের নিয়ে

থিয়াসস নামে তাঁর একটা বিশেষ স্কুল ছিলো যেখানে প্রেম, বিয়ে এবং জীবনের নানা দিক সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া

হতো। এরমধ্যে কারো কারো সাথে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক হয়ে যায় যেটা এই কুমারী নারী সমাজ মেনে নিতে পারেনি।

গিরিন্না, আত্তিস, এনাক্টরিয়া প্রমুখ নারীকে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। অবশেষে তাঁকে

আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিসিলিতে নির্বাসিত করা হয়।

তিনি ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ লেকাডিয়ান খাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ দেন। মহান নারী কবি স্যাফো আজ

নেই, রয়ে গেছে তাঁর প্রেমের কবিতাগুলো,

He’s equal with the Gods, that man

Who sits across from you,

Face to face, close enough, to sip

Your voice’s sweetness,

And what excites my mind,

Your laughter, glittering. So,


When I see you, for a moment,

My voice goes,

My tongue freezes. Fire,

Delicate fire, in the flesh.

Blind, stunned, the sound

Of thunder, in my ears.

Shivering with sweat, cold

Tremors over the skin,

I turn the colour of dead grass,

And I’m an inch from dying.

হদিসঃ

১। সাফোর কবিতা- ভাষান্তরঃ মুম রহমান

২। ইন্টারনেট

পোস্ট ভিউঃ 12

আপনার মন্তব্য লিখুন