পাঠ প্রতিক্রিয়া- আঠারো

ব্লগ পাঠ প্রতিক্রিয়া
পাঠ প্রতিক্রিয়া- আঠারো

পাঠ প্রতিক্রিয়া- আঠারো

 

বইয়ের নাম: আমি আবু বকর  

লেখক: আসিফ নজরুল    

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ২০২৪   

দ্বিতীয় মুদ্রণ: ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা   

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৩৪   

গ্রন্থের প্রকৃতি: সমকালীন উপন্যাস  

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী  

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক জনাব আসিফ নজরুল আশির দশকে সাংবাদিকতা করতেন, বিচিত্রার সাথে যুক্ত ছিলেন। একসময় বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় ওনার লেখা গল্প/উপন্যাস পড়েছি, এভাবেই ওনার লেখার সাথে পরিচয়। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ে তিনি পত্র- পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। তার উপন্যাসগুলোও সাধারণত সমসাময়িক পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং  রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপরে হয়ে থাকে। এরআগে তার লেখা উধাও, নিষিদ্ধ কয়েকজন, ক্যাম্পাসের যুবক, বেকার দিনের প্রেম ইত্যাদি উপন্যাসগুলো পড়েছি এবং কমবেশি ভালো লেগেছে। সেই ভালোলাগাই হয়তো বইমেলায় প্রথমার প্যাভিলিয়ন থেকে ‘‘আমি আবু বকর’’ কিনতে প্ররোচিত করেছে। ‘‘পদ্মজা’’র পাঠ প্রতিক্রিয়া (পাঠ প্রতিক্রিয়া-১৩) পোষ্ট করার পরপরই এই উপন্যাসের পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ‘‘ইমাম’’ (পাঠ প্রতিক্রিয়া-১৪) এবং ‘‘কর্ণ’’ (পাঠ প্রতিক্রিয়া-১৫) উপন্যাসের পাঠপ্রতিক্রিয়া পরপর লিখতে গিয়ে এটার কথা ভুলে গিয়েছিলাম।

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে- যুদ্ধের সময়- যুদ্ধের পরে এবং স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রনেতৃত্ব প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। এদেশের যাবতীয় আন্দোলন এবং সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এদেশের ছাত্রসমাজ। অথচ সেই ছাত্রনেতৃত্ব কিংবা সেই ছাত্ররাজনীতি বিবিধ কারণে আজ কলুষিত। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘‘আবু বকর’’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে বেদম পিটুনির শিকার হয়, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তার সহপাঠীও নির্যাতিত হয়। অস্তিত্ব রক্ষার্থে নির্যাতনের ক্ষত বুকে নিয়ে আবু বকর তাকে নির্যাতনকারী ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনে একসময় যোগ দিতে বাধ্য হয়। যে অন্যায় একসময় তার সাথে ঘটেছিল বলে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, এমনকি জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল, সেই একই সংগঠনে যোগদান করে আবু বকর নিজেও সেই অসাধুচক্রের অংশ হয়ে যায়। উপর মহলের নির্দেশে নিরীহ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্রসংঠনের সাথে জড়িত সন্দেহে কাউকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়া, সরকার বিরোধী ছাত্রসংগঠনের উপর হামলা করে নিজের আনুগত্য উপস্থাপন, বাইকিং বা পকেটে পিস্তল নিয়ে ঘুরাঘুরি করা হয়ে উঠে আবু বকরের প্রতিদিনের কাজ।     

 

'আমি আবু বকর' উপন্যাস আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈরাজ্য এবং অপরাজনীতির দিকে আমাদের দৃষ্টি আবদ্ধ করে। যার মধ্যে অন্যতম হলো আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র নির্যাতন। আবু বকর তার বন্ধু নাহিদসহ অন্যান্যরা অস্তিত্ব রক্ষার দৌড়ে আপাতদৃষ্টিতে সফল হলেও মিনহাজ নামের একজন ছাত্রকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে এসে অমানবিক ভাবে জীবন দিতে হয়। মিথ্যা অপবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রহল গুলোতে  এভাবে নির্যাতন করার প্রসঙ্গ এলে যে মুখটা চোখে ভাসে সেটা বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারের মুখ। উপন্যাসটা যখন পড়তে শুরু করেছিলাম তখন বারবার আবরারের কথা মনে পড়েছিল।     

 

উপন্যাসের প্লটে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রেমে পড়া বা ব্যর্থ হওয়া, শিক্ষকদের কারো কারো ছাত্রীর প্রেমে পড়া, ছাত্রনেতাদের প্রেম ইত্যাদি বিচিত্র বিষয় এসেছে। সবকিছু মিলে উপন্যাসটা যেন বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি, আমাদের চারপাশে যা ঘটছে লেখক তাই লেখার মুন্সিয়ানায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি এজন্য প্রশংসা পেতেই পারেন। ডেইলি ক্যাম্পাসকে লেখক বলেছেন, ‘‘এখনকার ছাত্ররাজনীতির একটা বড় অনুষঙ্গ হচ্ছে ছাত্রদের গণরুমে নির্যাতন করা। আবাসন সংকটের সুযোগ নিয়ে নির্যাতন করা। বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা। বিভিন্ন টক শো ও বক্তৃতায় বিষয়গুলো আমি ফুটিয়ে তুলেছি। তবে আমি মনে করি, একটি উপন্যাসে যেভাবে কোনো বিষয় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব তা অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়।’’ লেখকের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে তার উপন্যাসের সাফল্য কামনা করছি।   

 

উপন্যাসের বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সুন্দর প্রচ্ছদ।   

চমৎকার বাঁধাই এবং বইয়ের ঝকঝকে প্রিন্ট প্রশংসার দাবী রাখে।

 

সবাই ভালো থাকবেন। হ্যাপি রিডিং।

শুভ কামনা নিরন্তর।

সুমন সুবহান।

 

 

 

 



পোস্ট ভিউঃ 16

আপনার মন্তব্য লিখুন