নাচের পাখি- চাকদোয়েল

ব্লগ ইতিহাস, সাহিত্য ও ঐতিহ্য
নাচের পাখি- চাকদোয়েল

নাচের পাখি- চাকদোয়েল

 

নাচে আবার গায়ও– এমন পাখি খুব একটা দেখা যায় না। এ তেমনই এক পাখি। তবে নাচেই বেশি, গায় কম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, সারা দিনই সে নাচে। নাচটাও দেখার মতো। যেন পেখম খুলে নাচে। লেজটাকে পাখার মতো ছড়িয়ে দিয়ে, এই ডাল থেকে ওই ডালে নাচতে নাচতে ঘুরে বেড়ায়। তখন মনে হয় যেন এক রূপকথার পাখি। এই কারণে ওকে অনেকেই বলে নাচুনে পাখি। ভারতে তার নাম শামচিরি। আর বাংলায় বলা হয় চাকদোয়েল।

 

চাকদোয়েলের ইংরেজি নাম- White-browed Fantail

বৈজ্ঞানিক নাম- Rhipidura aureola

 

লম্বায় ১৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। কালো রংয়ের এই পাখিটাকে হুট করে দেখলে ধোঁয়াটে মনে হয়। মাথা কালো। মাথার দুপাশে চোখের ঠিক উপরের অংশ থেকে দুটি সাদা সরু দাগ আছে। মাথার কালো রং নিচের দিকে আসতে আসতে ধোঁয়াটে হয়ে আছে। গলা ও ঘাড়ের দুপাশ সাদা। পেট ধূসর। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে তার লেজ। সুন্দর করে সাজিয়ে জাপানি পাখার মতো ছড়িয়ে রাখে। নাচানাচি করার সময় লেজের দুপাশ থেকে ডালা দুটি ঝুলে থাকে। পা আর ঠোঁট কালো। এরা মূলত গাছপালায় ঘেরা ছোট ছোট জঙ্গলে বসবাস করে। পুকুরপাড়ের ঝোপঝাড় আর বৈচিত্র্যময় বাগান পেলে ওরা ছুটে আসবেই। সেই বাগান বা ঝোড়ঝাড় লোকালয়ের আশপাশে হলেও ক্ষতি নেই। ওরা জোড়ায় জোড়ায় একই এলাকায় নিয়মিত ঘোরাফেরা করে।

 

চাকদোয়েলের জীবনযাত্রা যেন সংগীত ও ছন্দের জালে জড়ানো। পোকা ধরার সময় দুই ঠোঁটের ঠোকরের কর্কশ ‘‘চাক-চাক’’ শব্দ শোনা যায়। কোনো কারণে বিরক্ত হলে কিংবা ভয় পেলেও এ ধরনের আওয়াজ করে ওরা। পাখিটি ছোট, তবে ভীষণ দুরন্ত আর দুর্দান্ত সাহসী। মানুষের উপস্থিতিতেও সে নির্বিকার। সে তার মতো করে নাচতে থাকে, গাইতে থাকে। লেজের পাখা ছড়িয়ে দিয়ে কখনও হাঁটে কখনও নাচে; মাতিয়ে রাখে তার নিজের জগৎ। মশা-মাছি আর এ জাতীয় ডানাওয়ালা ছোট ছোট পতঙ্গ এদের মূল খাবার। খাবারের প্রাচুর্য্য থাকলে ওদের গান যেন আর থামতেই চায় না।

 

চাক-দোয়েলের ছোট্ট সুন্দর বাসার গড়ন অনেকটা মদের গ্লাসের মতো। মিহি ঘাস আর তন্তু দিয়ে বানানো বাসটি দেখার মতোও বটে। বাসার চারদিকে মাকড়সার জাল দিয়ে ঢাকা থাকে। ফটিকজল পাখির বাসার সঙ্গে এদের বাসার বেশ মিল আছে। জমি থেকে দশ কিংবা তার চেয়েও বেশি উঁচুতে এরা বাসা বাঁধে। সেই বাসায় গোলাপি আভাযুক্ত হলদে রংয়ের তিনটি ডিম পাড়ে তারা। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৬-১৮ দিন সময় লাগে।

 

হদিস।

১। বাংলাদেশের পাখি- শরীফ খান

২।  www.bdnews24.com



পোস্ট ভিউঃ 15

আপনার মন্তব্য লিখুন