চিরকুট- তের
প্রসঙ্গ: ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা
১
মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরায় আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন।
ধৈর্যের আরবি হলো ‘‘ছবর’’। সহিষ্ণুতার
আরবি হলো ‘‘হিলম’’। ‘‘ছবর’’ ও ‘‘হিলম’’ শব্দের মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে। ‘‘ছবর’’ বা ধৈর্য
হলো অপারগতার কারণে বা অসমর্থ হয়ে প্রতিকারের চেষ্টা বা প্রতিরোধ না করা। আর ‘‘হিলম’’ বা সহিষ্ণুতার মানে হলো শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ না করা।
ধৈর্য ধারণকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত,
কারণ
আল্লাহ তাআলা ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন,
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা
সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’’। (সূরা-বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।
২
আমরা সাধারণত বিপদ-আপদে বিচলিত না হওয়াকেই ধৈর্য বলে মনেকরি,
তবে ধৈর্য অনেক ব্যাপক অর্থ বহন করে। ধৈর্য
তিন প্রকার। যথা: ‘‘ছবর আনিল মাছিয়াত’’ অর্থাৎ অন্যায়–অপরাধ হতে বিরত থাকা। ‘‘ছবর আলাত তআত’’, অর্থাৎ ইবাদত আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা। ‘‘ছবর আলাল মুছিবাত’’, অর্থাৎ বিপদে অধীর না হওয়া। (তাফসিরে বায়জাবি)। কোনো ব্যক্তি যদি উপরিউক্ত অর্থে ধৈর্য অবলম্বন করে, তবে তার জীবনে পূর্ণতা ও সফলতা অনস্বীকার্য।
কারণ প্রথমত, অন্যায়–অপরাধ
তথা পাপকার্য থেকে বিরত থাকা সকল প্রকার অকল্যাণ ও গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার
একমাত্র উপায়। দ্বিতীয়ত, ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদন করা সফলতার একমাত্র সোপান। তৃতীয়ত, প্রতিকূলতায়
দৃঢ়পদ থাকা লক্ষ্যে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম। পরিপূর্ণ ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা
দিতে পারে। আমাদের উচিত সকল অনভিপ্রেত অবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশে ও অনাহূত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত
রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়া।
৩
ধৈর্যশীল এবং বিনীত নারী-পুরুষদের জন্য রয়েছে পুরস্কার, এ বিষয়ে আল্লাহ
পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘‘ইন্নাল মুছলিমীনা ওয়াল মুছলিমা-তি ওয়াল মু’’মিনীনা ওয়াল
মু’’মিনা-তি ওয়াল কা-নিতীনা ওয়াল কা-নিতা-তি ওয়াসসা-দিকীনা ওয়াসসা-দিকা-তি
ওয়াসসা-বিরীনা ওয়াসসা-বিরাতি ওয়াল খা-শি‘‘ঈনা ওয়াল খা-শি‘‘আ-তি ওয়াল
মুতাসাদ্দিকীনা ওয়াল মুতাসাদ্দিকা-তি ওয়াসসাইমীনা ওয়াসসাইমা-তি ওয়াল হা-ফিজীনা
ফুরূজাহুম ওয়াল হা-ফিজা-তি ওয়াযযা-কিরীনাল্লা-হা কাছীরাওঁ ওয়াযযা-কিরা-তি আ‘‘আদ্দাল্লা-হু
লাহুম মাগফিরাতাওঁ ওয়া আজরান ‘‘আজীমা-।
অর্থাৎ
নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।’’ (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫)।
৪
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। সবার জন্য শুভকামনা। শুভরাত্রি।
পোস্ট ভিউঃ 9