১ ‘সাভারে আবারও বাস দুর্ঘটনা,উদ্ধার
তৎপরতা চলছে ঢিমেতালে’
খবরটা আজ দেশের প্রায় সব ক’টা সংবাদপত্রে বেরিয়েছে বেশ ফলাও করে। দুর্ঘটনার খবরটা অবশ্য
নতুন কিছুই না। সবসময় যেমনটা হয়ে থাকে আরকি। যাত্রীবাহী বাস বা যে কোনদুর্ঘটনার খবর বেশ গুরুত্ব দিয়েই পত্রিকাওয়ালারা ছেপে থাকেন।এবারও তার
ব্যাতিক্রম হয়নি। সকালের নরম রোদে সবাই চা খেতে খেতে অন্যান্য আর দশটা সাধারণ খবরের মতোই দুর্ঘটনার খবরটায় চোখ বুলিয়ে
নেন মাত্র। তারপর হয়তো কখনওবা মিছিল কিংবা সেমিনার, কিন্তু দু’দিন পরে গড্ডালিকা
প্রবাহে গা ভাসিয়ে ভুলে যায় সবাই। এ যেন নাগরিক জীবনের অনুসঙ্গ হয়ে গেছে। আমরা সবাই যেন এসব সহজ ভাবে মেনে
নিতে শিখেছি। কিন্তু যার আপনজনের বা
যে পরিবারের ক্ষতিটা হয়ে থাকে কিংবা যাদের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিটি
দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যুবরণ করেন, তারা কি আর সহজে ভুলে যেতে পারে সে
স্মৃতি! উত্তরটা বোধহয় না। এধরণের ঘটনা কখনও তাদের জন্য সুখস্মৃতি বয়ে আনে না। তবে আজ যে ঘটনাটা
বলছি তা অবশ্য খানিকটা অন্যরকম। পুরো ঘটনাটাই এক দিন আগের। অনেকের কাছে এটা অবিশ্বাস্য
মনে হতে পারে! ২ অন্যান্য দিনের মতো গতকালও অভি ঘুম থেকে উঠেছে বেশ
সকালেই। নাস্তার টেবিলে বসার আগে খানিকটা সকালের হাওয়া গায়ে লাগানো ওর অনেক দিনের অভ্যাস। সেসব সেরে অভি কলেজের উদ্দেশে
বাড়ি
থেকে বের হয় কিন্তু সেদিকে না যেয়ে সে মানিকগঞ্জের বাসে চেপে বসে। উদ্দেশ্য অবশ্য খারাপ
কিছু না। তারপরও মা শুনলে নির্ঘাত যেতে দিবেন না, তাই কাউকে কিছু না বলেই সেদিকে যাওয়া। মা’টার যে
হয়েছেটা কি! শুধু টেনশন তাকে নিয়ে। কিছুতেই একা কোথাও যেতে দিবেন না। ও যে বড় হয়েছে বা কলেজে পড়ছে মা যেন তা মানতেই চাননা!
অথচ ক’দিন আগে ওরই কলেজের বন্ধুরা সবাই সুন্দরবন বেড়িয়ে এল। অভি কত
করে যেতে চাইল কিন্তু মা’র ঐ এক কথা বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও যাওয়া চলবে না। আসলে ওনার ছেলে যে একটু ভাবুক প্রকৃতির আর সাধাসিধে ধরনের মা তা ভালো করেই জানেন। আর তা জানেন বলেই উনি ছেলেকে সাধারণত একটু আগলে বা চোখে
চোখে রাখতে চান। দিনকাল তো আর ভালো না! যেটা বলছিলাম। ধামরাইয়ের
কাঁসা শিল্পের ওপরে ক’দিন আগে ও ইন্টারনেটে একটা আর্টিকেল পড়েছিল। সেটাই
নিজের চোখে দেখে আসার বাসনা। তাছাড়া আজ কলেজে তেমন গুরুত্বপূর্ণ
কোনও ক্লাসও নেই। ওহ্, আগে তো বলাই হয়নি। অভি থাকে ব্যাংক টাউন,
সাভারে বাবা-মার সঙ্গে, আর সে পড়ে মিরপুর বাংলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে। অভি ওর
বাবা-মার প্রথম সন্তান আর দ্বিতীয় সন্তানটি হলো ওর চেয়ে দু’বছরের ছোট মুনা।ও পড়ে
সাভার ক্যান্ট পাবলিক স্কুলে। স্কুলের বাসেই আসা যাওয়া তার। বাবা মোঃ আজিজ সরকার একটা
বেসরকারি ব্যাংকের আমিন বাজার শাখায় চাকুরিরত, আর মা হলেন গৃহিণী। অভি ধামরাইয়ের
কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার সময়ে মানিকগঞ্জ-গাবতলি রুটের বাস পালকি পরিবহনে উঠেছিল। সাভার পর্যন্ত
বাসটা ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু সাভার বাজার পার হওয়ার পরে ড্রাইভারের যে কী হল! একই
রুটের আরেকটা বাসের সাথে অযথা পাল্লা দিতে গিয়ে ব্রীজের রেলিঙ ভেঙ্গে একেবারে
নিচের খাদে। মুহূর্তেই পানির নিচে যাত্রীসহ বাসটা তলিয়ে
যায়। তারপর মানুষের আর্ত চীৎকার, বাঁচার প্রবল আকুতি আর বাস থেকে যেকোনো ভাবে বের হবার
নিদারুণ প্রচেষ্টায় কী এক অসম্ভব ভীতিকর
পরিস্থিতির উদ্ভব! অভিও চেষ্টা করেছিল বাসের জানালাটা ভেঙ্গে বের হতে। কিন্তু
সাঁতার না জানা ফুসফুসটা আসলে পানির নিচে বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। নিমিষেই সময়টা
কেমন সাদাকালো স্থিরচিত্র হয়ে যায়। ও বোধহয় টেরও পায়না না! চোখের রেটিনাতে স্বপ্নরা কখন যেন
স্থির হয়ে গেছে! ৩ অতগুলো মৃতের সারি থেকে খুব কষ্টেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিল অভি।সাঁতারটা সে ভালো ভাবে
জানেনা। অথচ আজ কি অবলীলায় সাঁতরে বাসের বাইরে চলে এলো। রাস্তায়
উঠে ব্রীজের রেলিংটা ধরে বিষাদ ভরা দৃষ্টিতে ও তাকিয়ে থাকে নিচে মানুষের জটলার
দিকে। সেখানে এখন বেশ কর্ম চঞ্চলতা।এমনকি রাস্তার ভবঘুরে
পাগলটাও উদ্ধারকাজে
হাত লাগিয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধারের
তৎপরতা চলছে। রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটির ডগায় বসে দুটো দাঁড়কাকও দেখছে সে দৃশ্য।
একটু পরপর বৈদ্যুতিক তারে দোল খেয়ে কা কা করে উঠছে বিষণ্ণ কাকদুটো। ফায়ার সার্ভিসের
লোকেরা তখনও এসে পৌঁছেনি। তবে সাভার থানা থেকে দু’জন কনস্টেবল এসেছেন।
তারা গাড়ির নাম্বার প্লেট আর লাশের সারি থেকে ড্রাইভারকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করছেন। স্থানীয়রা
বসে না থেকে হাত লাগিয়েছে উদ্ধারে। ডুবুরী চোখ তাদের খুঁজে চলছে কোন বেঁচে থাকা যাত্রীর আশায়। কিন্তু তার বদলে একে
একে তাদের হাতে উঠে আসছে অনেকগুলো মৃতদেহ।শিশু-যুবা-বৃদ্ধ সব বয়সের-সব ধরণের। কারও পরনে
দামী ফুল শার্ট আবার কেউবা শায়িত জীর্ণ মলিন পোশাকে।মৃত্যুর শীতল
আলিঙ্গনে আজ সবাই একাকার। একেকটা মৃতদেহ যেন হঠাৎ থেমে যাওয়া একেকটা মহাকাব্য। অজস্র
স্বপ্ন-আবেগ আর ভালবাসার আধার যেন একেকটা। একটা ছোট শিশুর লাশকে
একজন উদ্ধার করে খালের পাড়ে এনে শুয়ে দিল।শিশুটির শক্ত হাতের মুঠোয়
তখনও ধরা আধখাওয়া কাঠি লজেন্সটা। হয়ত বাঁচার আকুতিতে শুকনো কাঠিটাই ছিল তার শেষ অবলম্বন! কিংবা
একটা কিশোরী। বয়সের সন্ধিঃক্ষণে যার বিয়ে হয়েছিল হয়তোবা। রোগা ফর্সা হাত থেকে
মেহেদির রঙ মুছে যায়নি তখনও। হাতে ভাঙা
কাঁচের চুড়ি আর মাথায় রঙিন ফিতা তার। অথবা ওই সাদা পাঞ্জাবির বুক পকেটে ঝর্ণা কলম গুঁজে থাকা বৃদ্ধটির
কথাও বলা যেতে পারে। যে হয়তোবা জীবন যুদ্ধে পরাজিত কোন এক দরিদ্র স্কুল মাস্টার। বাড়িতে যার হয়তো শুকনো
উপোসি অনেকগুলো মুখ চেয়ে আছে তার জন্য, তার
ফেরার অপেক্ষায়। কেমন একটা হাহাকার বুকের ভিতরে ধেয়ে আসে। কেন যেন সব কিছু ফাঁকা
ফাঁকা, এলোমেলো লাগে অভির। কি এক
বিবাগী শূন্যতায় পেয়ে বসে তাকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎই মনেপরে যায় মা’র কথা। উদাস
দৃষ্টিতে বাসার উদ্দেশে রওনা দেয় অভি।ঘটনাস্থল থেকে আর খানিকটা এগোলেই
ব্যাংক কলোনি, ওদের বাসা। তার উষ্ণ আশ্রয় স্থল, যেখানে মা’র ভীরু চোখ ওর অপেক্ষায় থাকে
সবসময়। বাসার গেটটা কেন যেন আজও খোলা পড়ে আছে। এটা অবশ্যই
মুনার কাজ। মা দেখলে নির্ঘাত রাগারাগি করবেন। একদম খেয়ালি আর আদুরে
ওর বোনটা।এতো করে বলা হয় তবুও সে গেটটা বন্ধ করতে ভুলে যাবেই যাবে! বারান্দার খাঁচায়
পোষা নিঃসঙ্গ ময়নাটা একা খাঁচার ভিতরে নেচে যাচ্ছে। আজ কিন্তু অ-ভি
ট-ভি বলে ডাকলো না ময়নাটা। সে একটু অবাক হয়।ড্রয়িং রুমের দরজাটা আধখোলা ছিল। বাসায় ঢুকে
ও সরাসরি চলে যায় নিজের রুমে। ময়লা
কাপড় ছাড়তে হবে যে! স্নানটাও সাড়া দরকার। দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
আর কিছুক্ষণ পরেই হয়তো মা ডাকাডাকি শুরু করবেন। সে বাসায়
ঢুকেছে ঠিকই কিন্তু আজকের অভিজ্ঞতাটা যেন একটু অন্যরকম মনেহচ্ছে তার কাছে। অন্যধরণের শিরশিরে
একটা অনুভুতি কিন্তু ঘটনাটা অভি ঠিক আঁচ করতে পারছে না। বাসায় মুনার
পোষা সাদা বেড়ালটা যেভাবে নিঃশব্দে ঘুড়ে
বেড়ায় বাড়িময়, আজ ওর নিজের অবস্থাটাও যেন তেমনি হয়েছে। সেও যেন আজ সাদা
বেড়ালটা হয়ে গেছে। ঘরে ঢোকার সময় মা মনেহল দেখলেন, কিন্তু
মুখে কিছু বললেন না। এরকম সাধারণত
হয়না। কি জানি কেন! বাবার অফিস আজ বন্ধ। এই অবেলায় সাদা রঙের পাতলা ফতুয়ায় ইজি চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছেন। পেপারটা বুকের ওপরে ভাঁজ
করে রাখা আর মাথার উপরে ফ্যানটা একঘেয়ে ভাবে বন্বন্ করে ঘুরছে। চশমাটা যথারীতি
পাশের ছোট টেবিলটায় পড়ে আছে আড়াআড়ি ভাবে। চা’র কাপটা খালি। একটা
দিকভ্রান্ত মাছি অনবরত খাবি খাচ্ছে তাতে। বাসাটায় কেমন যেন একটা নিস্তব্ধতা। দুপুর
গড়াবে বলে। বছরের এই সময়টায় এমনিতেই প্রখর নির্জনতা ছেয়ে থাকে। বাইরে খাঁ খাঁ
রোদ্দুর ফেটে পড়ছে যেন! বেশ গরম পড়েছে আজ। দূরে কোথাও তৃষ্ণার্ত কাক অবিরত
কা কা করে যাচ্ছে। অভি মন খারাপ করে জানালার কাছটাতে এসে দাঁড়ায়। বেড়ালটা বোধহয়
পর্দার আড়ালে ছিল। হঠাৎ লাফিয়ে পালালো। ওকে দেখে নাকি ইঁদুরের
খোঁজে কে জানে! মুনা একবার এসে দরজার পর্দাটা সরিয়ে উকি দিয়ে চলে গেল। হয়তো খুনসুটি করার জন্য, কিন্তু মুখে
কিছু বললো না ওকে। আজব! মুনা’টা সব সময় ওর
পিছনে লেগে থাকে। ওকে না জ্বালালে যেন বোনটার পেটের খাবার ঠিক হজম হয়না।
অথচ আজ ও কিছুই বললো না। পাশের ঘরে মা আর মুনা
কি নিয়ে যেন মৃদু স্বরে কথা বলছেন।শোনা যায় আবার ঠিক শোনা যায়না। সম্ভবত বাস দুর্ঘটনার
খবরটাই মা’কে জানাচ্ছে। স্কুলের বান্ধবীদের কাছ থেকে ফোনে শুনেছে হয়তোবা। ও আবার
গল্প বলায় পটু। হয়তো ওটা শুনেই মা টিভিটা চালু করলেন। দুপুরের খবর হচ্ছে। টিভিতেও
দেখাচ্ছে দুর্ঘটনাটার সচিত্র প্রতিবেদন। উদ্ধার তৎপরতা তখনও
চলছে বেশ জোড়েসোরে। লাশের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। লোকাল রুটের গাড়ি তো!
তাই কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না ঠিক কত জন যাত্রী ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের
লোকেরা অবশ্য চেষ্টা করছেন তাদের সাধ্য মতো। একজন
অফিসার উদ্ধার তৎপরতার উপরে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিলেন। কিন্তু সব
সময় এসব ক্ষেত্রে যেমনটা হয়ে থাকে আরকি। কৌতূহলী দর্শকের চাপে
উদ্ধার তৎপরতায় খানিকটা বিঘ্নতা ঘটছে।দেশে বিনোদনের এত
অভাব যে মানুষ হাতের নাগালে যা পায় তা দিয়েই বিনোদনের
ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করে থাকে। মা যেন
খানিকটা উদাস হয়ে টিভির পর্দা থেকে মুখ ফিড়িয়ে শাড়ির আঁচলে চিবুকের ঘাম মুছলেন। মা কি তার
জন্য দুশ্চিন্তা করছেন! কি জানি, হয়তোবা করছেন! ৪ ডাইনিং রুম থেকে প্লেট চামচের টুং টাং শব্দ ভেসে আসছে।
বোধহয় খেতে বসেছে সবাই। অভি কান পেতে আছে
মায়ের ডাকের অপেক্ষায়। বাবা কি নিয়ে যেন কথা বললেন,
আর তা’ শুনে মুনা হাসছে। মা’ও যোগ দিলেন সে হাসিতে। আশ্চর্য এরা সবাইকি
আজ ভুলে গেছে তার কথা! তাকে না ডেকেই কি সুন্দর ভাবে সবাই খেতে বসে গেছে। অভি রাগ
করে রান্নাঘর থেকে নিজের প্লেটটা এনে মুনার পাশের চেয়ারটাতে যথারীতি বসে পড়ে। ওটা
ফাঁকাই ছিল। খাবার সময়ে রোজ ওটাতেই যে সে বসে থাকে! বাবা দেয়াল ঘড়িটার
দিকেদু’বার তাকালেন। মুনাও একবার কি ভেবে এ পাশে ফিরে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। মা খেয়ে যাচ্ছেন চুপচাপ। বেড়ালটা মুনার
পায়ের কাছে লেপ্টে আছে বরাবরের মতো। একবার গলা তুলে অভির দিকে তাকিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ করলো কিন্তু
পরক্ষনেই চুপ হয়ে গেল। আচ্ছা এরা সবাই বোবা হয়ে গেল নাকি, সবাই মিলে ওর সঙ্গে
কথা না বলার কঠিন পণ করেছে যেন। মাকে আস্তে করে বললো প্লেটে খাবার তুলে দিতে। মা বোধহয়
ডাকটা শুনতে পাননি। আবারও বলল অভি, কিন্তু মা কিছু বলছেন না,আবার
প্লেটে খাবারও তুলে দিচ্ছেন না। কি আশ্চর্য এরা সবাই আজ ওর সঙ্গে এরকম করছে কেন? ও
নাহয় বাসার কাউকে না বলেই ধামরাই গিয়েছিল কিন্তু তাই বলে সবাই
ওর সঙ্গে এরকমআচরণ করবে! ওতো পরে সব জানাতোই! ছবিও তুলেছে এক গাদা সবাইকে দেখাবে বলে। ধুর্!
ভাত’ই খাবেনা আজ। রাগ করে উঠে পড়ে চেয়ার থেকে। অভি গট্গট করে হেঁটে বাসার ছাদে
চলে যায়। ৫ এদিকটাতে এখনো সেভাবে দালান কোঠা গড়ে ওঠেনি। অনায়াসে
দৃষ্টিটা ফসলের মাঠ ছুঁয়ে বহুদূর পর্যন্ত চলে যায়। অভি সেদিকে
খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর তার দৃষ্টিটা এসে থম্কে দাঁড়ায় পেয়ারা গাছের ডালে সদ্য
বোনা টুনটুনির বাসাটাতে। বাজার থেকে খালি ড্রাম কিনে এনে ছাদে পেয়ারার গাছটা ও
নিজেই লাগিয়েছিল। তাতে ডাঁসা পেয়ারাও ধরেছে বেশ ক’টা। কিন্তু টুনটুনির
বাসাটা এর আগে অভি খেয়াল করেনি। পেয়ারার ডাল থেকে নেমে আসা লালচে পিঁপড়ের সাড়িটা
অনুসরণ করে নিজের পায়ের দিকে চোখ পড়তেই অভি চম্কে উঠে। প্রখর সূর্যটা মাথার
উপরে মগজ গলিয়ে দিচ্ছে আজ অথচ ওর শরীরের ছায়াটা কোথাও চোখে পড়ছেনা। আসে পাশে হতভম্ব
হয়ে তাকালো। না, সবই ঠিক আছে শুধু ওর ছায়াটা ছাড়া। ওটা নেই ওর সঙ্গে। ছায়াটা ওকে ছেড়ে চলে গেছে। অভি কি করবে ভেবে পায়না। অভি নীচে নেমে ওর রুমের ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়ায়।না। সেখানেও কেবলই
নিঃসীম শুন্যতা। কিছুই
দেখা যায়না। অভি ওর প্রিয় শরীরটাকে খুঁজে না পেয়ে প্রবল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।