ভালোবাসার গল্প

কবিতা জলের কাছে যাবো
ভালোবাসার গল্প

ঝকঝকে কাঁচের দেয়াল-সীসার চাদর
আকাশ ছুঁইছুঁই শহরের কেউ জানেনা,
আমাদের জানালায় মনখারাপ করা 
অনেকগুলো বিকেল ছিল-সন্ধ্যে ছিল,
আমাদের অনেকগুলো বিদায় সম্ভাষণ ছিল
হৃদয় আর্দ্র করা, “আজ তবে আসি,
নিজের দিকে খেয়াল রেখো,
ওষুধটা খেয়ো ঠিকমতো, রাত জাগবেনা কিন্তু”
...................এরকম আরো কতো কিছু।
বিটুমিনের রাজপথ-জেব্রা ক্রসিং-উড়াল সড়ক
ছুটে চলা ঘড়ির কাঁটা, কেউ না জানুক-
রাতজাগা ল্যাম্পপোষ্টগুলো ঠিকই জানতো,
বাষ্পরুদ্ধ চোখে তারা দেখতো-
দুটো মানুষের আঙুল ছোঁয়ার অসীম তৃষ্ণাটুকু,
ছায়ার মাপে তারা ঠিক বুঝে যেতো
আমাদের ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু!
 
এই শহরে কোজাগরী রাত নেই
এখানে ডাহুকের ভেজা চোখ, নিঃসঙ্গ খন্জনা
কিংবা জোনাকির দেখা মেলেনা, এখানে-
নাগরিক বেলি ফুল আর ডোপামিন ভুরভুর সন্ধ্যেয়
সোডিয়াম লাইটের অশরীরী আলোয়-
কাজল চোখের তুমি মৌনতার অর্গল খুলে
উষ্ণতা বিলিয়ে যেতে আর-
দৃষ্টির গভীরতায় ভিজে এক সা হয়ে যেতো
আমাদের অক্ষমতাগুলো।
এই নগরের হাজারো ডুবুরি চোখের মাঝে
লোকের অজস্র কোলাহলের মাঝে
আমরা দুই মিলে এক হতে শিখেছিলাম,
কারণ আমরা ভালোবেসেছিলাম।
আমাদের ভালোবাসার একটা মিষ্টি পদ্য ছিল,            
শহরের ফুটপাতে-রেস্তোরায়-চৌরাস্তায়-ফোয়ারায়
আমরা ভালোবাসার লিরিক বিছিয়ে ছিলাম।
 
আমাদের ভালোবাসার দিনগুলো ছিল-
বৃষ্টির শেষে ঝলমলে রোদ্দুরের মতো,
বিকেলের কার্ণিশ বেয়ে নরম তুলোট আভা
থমকে যেতো তোমার ঠোঁটের কোণটাতে।
আমরা চোখের ইশারায় কথা বলতাম
আর অফিস ছুটির শেষে, শ্রাবণ ঘন দিনে
স্টাফ বাসের দিকে তাকিয়ে থাকতাম,
তোমার অমন অন্ধকার চুল-ঘন জুলফি
লুকোনো হাসি, ট্রাফিক জ্যামে হারিয়ে যেতো।
ব্যাক লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
আমি নিকোটিনের শেষ কুণ্ডলীটা- 
আকাশে ছুঁড়ে দিয়ে আপন ডেরায় ফিরতাম।
এই শহরের দেয়ালে সাঁটানো পোস্টার-
ব্যানার-ড্যাংলার-বিলবোর্ড না জানুক
সূতোর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি ঠিকই জানতাম,
আমরা একদিন সত্যিই ভালোবেসেছিলাম।

পোস্ট ভিউঃ 59

আপনার মন্তব্য লিখুন