ছোটবেলায় আমার একটা আকাশ ছিল একদম নিজস্ব আকাশ, সত্যি- কিনতে হয়নি, রাতজাগা পাখিটা দিয়েছিল ঘুমের বদলে। বুকের মাঝে আকাশ পেতে তার নাকি ঘুম আসেনা রাত জেগে সে তাই তারা
গুনতো সে জানতো, কোন তারাটা নতুন এলো কোন তারাটা মরে গেল আর কোন তারাটা উল্কা হয়ে- পথের মাঝেই মিলিয়ে গেল, পাখিটা আমার সব ঘুম তার চোখে মেখে নিজেই একদিন হারিয়ে গেলো- কোথায় গেলো তাও
জানিনা। আমি কিন্তু ঘুমের বদলে- ব্যক্তিগত আকাশ নিয়ে খুশীই
ছিলাম। বোশেখ মাসের এক অলস দুপুরে ইতি ওর সোনালী চিবুক থেকে আমাকে একটা রংধনু দিয়েছিল, আমি সেটা আকাশে সেঁটে দিয়ে ছিলাম। আমি ইতি’র ফ্রোক থেকে সবুজ ঘাসের বন, চোখের কাজল থেকে কিছু মেঘ নিয়ে ছিলাম আর মন খারাপের একলা বিকেলে ওর চোখের জল নিয়ে একটা নদীও বানিয়ে ছিলাম। লুকোচুরি খেলার ফাঁকে- ইতি একদিন আমাকে পাহাড় দিয়ে ছিল, আমি সেটাও সাজিয়ে নিলাম, কারণ- আকাশ, রংধনু, সবুজ ঘাসের বন, মেঘ আর নদীর সাথে পাহাড় না থাকলে কি মানায়! এভাবে সব মিলিয়ে আমি কৈশোরেই সুন্দর একটা রাজ্য
গড়ে ছিলাম। আমার রাজ্যে আমিই রাজা, আর রাণী…… ইতি রাণী না হতে চেয়ে- ভবঘুরে ঘুরি হতে চেয়ে ছিল, আমি তাও মেনে নিয়ে তাকে আকাশে উড়িয়ে দিলাম। এরপর সেই রাতজাগা পাখিটার মতো- ইতিও হারিয়ে গেল, অন্য আকাশের ভাঁজে, অন্য আকাশের ঠিকানায়। পাখিটা আমার ঘুম নিয়ে গিয়ে ছিল আর- ইতি নিয়ে গেল আমার রংধনু,মেঘ,বন,পাহাড় ভেজা স্বপ্ন, কিন্তু ও নদীটা নিতে
পারেনি, ওটা আমি বুক পকেটে রেখেছিলাম- ইচ্ছে হলে কাঁদবো বলে। আমার এখনো সেই আকাশটা আছে মনখারাপের বিকেল আছে, চোখ ভাসানো নদীটাও আছে, শুধু পোড়া চোখে ঘুম
নেই।